
সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতার ভিড় কম হলেও পণ্যের দাম কমেনি। উল্টো এই সপ্তাহে পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে গরিবের বা খেটে খাওয়া মানুষের মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। এ ছাড়া নতুন করে বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সপ্তাহে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বাজারে এখন মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি। এখন পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি। বাজারে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৭ টাকা কেজি।
এদিকে টিসিবির হিসাব বলছে, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪.৩৫ শতাংশ।
চাল বিক্রেতা হানিফ মিয়া বলেন, বন্যা, বৃষ্টি ও লকডাউনের কারণে বাজারে চাল সরবরাহ কমেছে। তিনি বলেন, চালের দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। আগামীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গাজরের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা কেজির গাজর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। একইভাবে ৮০ টাকা কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মানিক বলেন, বেগুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। ৫০ টাকার কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া ঝিঙে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। চিচিঙ্গার কেজি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে করল্লা ৬০ টাকা, চাল কুমড়া কেজি ৪০-৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৪০ টাকা। শসার দাম ৪০ টাকা। কাঁকরোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। সবজির দামের বিষয়ে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আয়নাল বলেন, বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে সামনে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে।
মুদি দোকানি সোয়েব বলেন, লকডাউনের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। রাস্তায় নামলেই ট্রাক ও পিকআপের চালকদের মামলা, জরিমানা গুনতে হচ্ছে। চালকেরা তাই গাড়িভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি পিয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মাছের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে সামান্য বেশি। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। চিংড়ি আগের মতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা কেজি। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগি। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। আর ফার্মের মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। অবশ্য গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
বাজারে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসলে তেমন কিছুই কেনা যায় না। করোনার কারণে এমনিতেই আয় কমে গেছে। এখন সবকিছুর দাম বাড়লে, আমাদের কী অবস্থা বুঝে দেখেন?